পারভেজ হত্যাকাণ্ড: শিক্ষাঙ্গনের বেদনা, ন্যায়বিচারের লড়াই
পারভেজ
১৯ এপ্রিল ২০২৫ — শিক্ষাঙ্গনের ইতিহাসে আরেকটি শোকাবহ দিন।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ বনানীতে নির্মম ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন।
তুচ্ছ একটি হাসি, কিংবা হয়তো কোনো নিছক ভুল বোঝাবুঝি — তারই ফলাফল আজ একটি মায়ের বুক খালি, একটি পরিবার শোকে ভেঙে পড়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়:
সত্যিই কি কেবলমাত্র হাসির প্রতিক্রিয়ায় একজন তরুণের জীবন কেড়ে নেওয়া হলো, নাকি এর পেছনে ছিল সুপরিকল্পিত গভীর ষড়যন্ত্র?
ঘটনার শুরু হয় যখন পারভেজ পরীক্ষা শেষে বনানীর একটি দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন।
পাশের দোকানে থাকা দুই নারী শিক্ষার্থীকে দেখে হেসে ওঠেন তিনি।
এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে নারী শিক্ষার্থীরা ফোনে তাদের পরিচিত যুবকদের ডেকে আনে।
শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, যার পরিণতি হয় ভয়াবহ — পারভেজকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা এক বাক্যে জানিয়েছেন —
পারভেজ কখনোই অসৌজন্যমূলক আচরণ করেননি।
উল্টো প্রক্টর অফিসে তাকে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইতে বলা হয়, যা সে বিনয়ের সঙ্গে মেনে নিয়েছিল।
তবুও তার ভাগ্যে রক্ষা ছিল না।
নিঃশব্দ এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয় এই তরুণ শিক্ষার্থীকে।
তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
ঘটনায় জড়িত দুই নারী শিক্ষার্থী —
ফাতেমা তাহসিন ঐশী (বিবিএ)
ফারিয়া হক টিনা (ইংরেজি বিভাগ)
এরা বনানীর ইউনিভার্সিটি অফ স্কলারস-এর শিক্ষার্থী।
ঘটনার পর থেকেই তারা আত্মগোপন করেছে, তাদের ফোনও বন্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করেছে এবং ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
এছাড়া ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে —
মাহাতীর নিয়াজ তোষা (ইংরেজি বিভাগ)
পিয়াস (এলএলবি বিভাগ)
মেহরাজ (বিবিএ বিভাগ)
তাদের সাথে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারীও ছিল।
পুলিশের তথ্যমতে, ঐশীর প্রেমিক পিয়াস এই হামলার অন্যতম কুশীলব।
তারা একে অপরের পুরনো পরিচিত — বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও কিছু সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
একটি হাসি কীভাবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়?
কীভাবে সামান্য ব্যক্তিগত ক্ষোভের জেরে এক তরুণের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়?
পারভেজের পরিবার, তার সহপাঠী এবং শিক্ষকরা একবাক্যে বলছেন —
আমরা ন্যায়বিচার চাই, দ্রুত বিচার চাই।
এই ঘটনার নেপথ্যে যারা ছিল — চক্রান্তকারী, হামলাকারী বা উৎসাহদানকারী —
সবার বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
তাদের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যাতে আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়।
পারভেজ যেন শেষ শিকার না হয় — এই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
লেখা: [মতিউর রহমান লিটন]
সূত্র: বাস্তব ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষণ