প্রবাসী হলে পড়ুন |। প্রবাসী জীবন ও তাদের কষ্টের পরিচয়

 সৌদি প্রবাসীদের

হাফিজুর রহমান একসময় গ্রামের হোটেলে কাজ করত। ধার দেনা করে পাড়ি জমায় সৌদিতে—ভাবছিল, দুই-তিন বছরে ভাগ্য বদলাবে। কিন্তু বাস্তবতা কঠিন। রোদে পুড়ে, বালিতে গড়াগড়ি খেয়ে এখন সে নির্মাণ সাইটে। সারা দিনে একবার পানি পান করার সুযোগ পায়, আর রাতে বাসায় ভিডিও কল দেয়—হাসি দিয়ে বলে, “আমি ভালো আছি মা।” অথচ মুখটা তখন বিবর্ণ, ক্লান্ত, চেপে রাখা কান্নায় ভারী।

প্রবাসীদের গল্প

---

সৌদি প্রবাসী খবর

রফিকুলের খবর কেউ জানে না। পরিবার ভেবেছে সে সুখে আছে। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় একটি ভিডিও—একজন বাংলাদেশি হাউজ ড্রাইভারের কান্নাজড়ানো আরবি ভাষায় চাকরির অনুরোধ। পরে জানা যায়, ওটাই রফিকুল। মালিক বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, পাসপোর্টও নিয়ে নিয়েছে। এখন রাস্তায় কাটে তার রাত—এখন সেই খবর শুধু কান্না নয়, দেশের মাটিতে একটা হাহাকার হয়ে ফিরে আসে।

---

সৌদি প্রবাসী নিউজ

সৌদি আরবের এক হাসপাতালে ভর্তি হয় শামীম নামের এক তরুণ। সে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত সময় ডিউটি করছিল, ছুটি ছাড়া। অফিস থেকে বলা হয়েছিল, ‘যদি ছুটি চাস, নতুন লোক আন।’ সে অপেক্ষা করে যায়… অপেক্ষায়ই অসুস্থ শরীর তাকে বিছানায় পাঠায়। সৌদি নিউজে লেখা হয়, "অবৈধ অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা—বাংলাদেশি কর্মচারীর জীবন বিপন্ন।” কিন্তু এই নিউজ তার বৃদ্ধ বাবার চোখে শুধু পানি হয়ে গড়ায়।

---

সৌদি প্রবাসীর বউ

আসমার স্বামী ৬ বছর ধরে সৌদিতে। প্রথম দুই বছর নিয়ম করে ফোন করত, টাকাও পাঠাত। তারপর একদিন হঠাৎ তার ফোন নম্বর বন্ধ, কোনো খোঁজ নেই। আশপাশে কেউ বলে সে নতুন করে বিয়ে করেছে সৌদিতে। আসমা বিশ্বাস করে না, এখনও রাত জেগে ফোনের অপেক্ষায় থাকে। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে সে শুধু বলে—“তোর আব্বা একদিন ঠিকই ফিরবে রে…”

---

সৌদি প্রবাসী

সাব্বিরের চোখে ছিল স্বপ্ন—বিদেশে গিয়ে মা-বাবাকে পাকা ঘর বানিয়ে দেবে। কিন্তু কোম্পানির কাজ ছিল দালালের প্রতারণায় ভরা। সে এখন রিক্রুটিং অফিসে ঘুমায়, দিনে ঘণ্টায় ১২-১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে। মাঝেমধ্যে নিজেই প্রশ্ন করে, “এটা কি সেই জীবন—যার জন্য আমি সব ছেড়ে এসেছিলাম?”

---

সৌদি প্রবাসীর বেতন ২৫০০ রিয়াল

রিয়ালের অঙ্কে জীবন কখনো হিসাব মেলে না। মনিরের বেতন ২৫০০ রিয়াল, মাসে দেশ পাঠায় ২০০০ রিয়াল। বাকি ৫০০ দিয়ে নিজে চলে—তাও কষ্টে। নতুন জুতা কেনে না, ভালো খাবার খায় না। একদিন ছোট ভাই ফোনে বলে, “দোস্তরা আইফোন নিচ্ছে, আমিও চাই।” মনির কিছু বলে না—চোখ মুছে ফোনটা রেখে দেয়… তারপর লিস্টে নতুন করে একটা কিস্তি যোগ করে।