সোনারগাঁয়ে সম্পত্তির জন্য বৃদ্ধ বাবা'কে পেটালেন: আপন দুই ভাই

 মানুষের মুখোশ আর ধর্মের ছায়া: এক নির্মম সত্য

সোনারগাঁয়ে সম্পত্তির জন্য বৃদ্ধ বাবা'কে পেটালেন আপন দুই ভাই।

আনুমানিক ২৬ এপ্রিল ২০২৫

একটি সন্তান যখন নিজের সেই বাবার উপর নির্দয়ভাবে হামলা চালায়, যে বাবা তাকে না খেয়ে মানুষ করেছে, তখন সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র আর নতুন করে বলার কিছু থাকে না। সোনারগাঁয়ের সেই ঘটনা হৃদয় ভেঙে দেয়—দুই ভাই সম্পত্তির লোভে বৃদ্ধ বাবাকে মারধর করে, পায়ের নিচে পিষে ফেলে। রক্তে ভেজা সেই বাবার আর্তনাদ হয়তো বাতাসে মিলিয়ে যায়, কিন্তু মানবতার লজ্জা থেকে যায় স্থায়ীভাবে।

বাবার নাম: রহিম 

দুই সন্তানের নাম: জহির, সাইফুল 

আজকের দিনে, সমাজের এক শ্রেণির মানুষ নিজেদের ধার্মিক পরিচয়ে গর্ব করে—কপালে নামাজের দাগ, হাতে তসবি। অথচ মসজিদ থেকে বেরিয়েই তাদের হাতে জ্বলছে সিগারেট, মুখে বিষের গন্ধ আর অন্তরে পচন। ধর্মকে যারা নিজের সামাজিক শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর ঢাল বানায়, তারা নিজেরাই মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রু।

নামাজ যদি চরিত্র না বদলায়, তাহলে সেই নামাজ কিসের? যদি ইবাদতের পরেও কেউ বাবার রক্তে নিজের পাঞ্জাবি ভেজায়, তাহলে সে কোন কাতারের মানুষ? মানুষ তো দূরের কথা, পশুত্বও এর চেয়ে সম্মানজনক।

বাবা-মা যখন সন্তানের জন্য সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করে, দিনের পর দিন ক্ষুধায় দিন কাটিয়ে সন্তানদের বড় করে, তখন তারা একটিমাত্র স্বপ্ন দেখেন—সন্তান একদিন মাথা উঁচু করে বলবে, "এটা আমার বাবা, যিনি আমাকে মানুষ করেছেন।" কিন্তু যখন সেই সন্তান বাবার হাড় গুঁড়িয়ে দেয় সম্পত্তির লোভে, তখন শুধু একটি পরিবার নয়, গোটা সমাজ বিপন্ন হয়।

এইসব নামধারী "নামাজি" মানুষগুলোর ভেতরের শয়তানই বড় হয়। ধর্মের আসল সৌন্দর্য, যে শিক্ষা দিয়ে মানবিকতা, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে, সেটা তাদের অন্তর ছুঁয়েও যায় না। কপালে দাগ পড়লেও মন কলুষিত, অন্তর কালো। তারা নিজেরাও ধ্বংস হবে, সাথে সমাজের মেরুদণ্ডেও আঘাত করবে।

একটা প্রশ্ন জেগে থাকে—এমন পাপের ক্ষমা কি আদৌ হয়? যে হাত বাবাকে রক্তাক্ত করে, সেই হাতে দোয়া কি আর পৌঁছায়? যারা পিতার রক্ত নিয়ে পবিত্রতার মুখোশ পরে, তাদের পরিণতি বড়ই ভয়াবহ।

প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে পরিষ্কার করেন, যেন আমাদের সেজদা কেবল মাটিতে নয়, হৃদয়ে হয়। যেন আর কোনো মা-বাবাকে এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয়। যেন প্রতিটি সন্তান বুঝতে পারে—জগতের সব ইবাদতের চেয়ে বড় ইবাদত হলো বাবা-মার সন্তুষ্টি।

লেখা: [মতিউর রহমান লিটন]

সূত্র: বাস্তব ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষণ