---
১. পুরুষ টাকার মেশিন
জসিম প্রবাসে থাকে ৮ বছর ধরে। গরমে পুড়ে, শ্রমে ভিজে, সে মাসে মাসে টাকা পাঠায়। দেশে তার স্ত্রীর নতুন গহনা, ছেলের ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি—সবই তার ঘামে কেনা। কিন্তু বছরখানেক আগে ফোনে স্ত্রী বলল, “শুধু টাকা পাঠালে হবে না, সংসারও তো চাই।” জসিম চুপচাপ জানাল, “আমি তো মানুষ না, আমি তো তোমাদের জন্য একটা মেশিন—টাকার মেশিন!”
---
২. টাকার মেশিন অচল
হুমায়ুন ভাই ছিলেন এক সময়ের দুর্দান্ত ফোরম্যান। মেশিন চালিয়ে, ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ বানালেন। হঠাৎ স্ট্রোক করে শরীর পক্ষাঘাতে অবশ। দেশে ফেরত এলে কেউ এক গ্লাস পানিও জিজ্ঞেস করল না। যেদিন আয় ছিল, সবাই আপন ছিল। আজ সে ‘অচল’—একটা অচল টাকার মেশিন, যেটার মূল্য ফুরিয়েছে।
---
৩. একটা টাকার মেশিন
তাহের ভাই কাতারে থাকে। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করে। দেশে ফোন দিলে সবাই চায়—টাকা, উপহার, দাওয়াত। কেউ জিজ্ঞেস করে না, “তোমার কেমন লাগে?” নিজেকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে—"আমি কি মানুষ? না কি একটা নিরবচ্ছিন্ন চালু থাকা টাকার মেশিন?"
---
৪. প্রবাসী টাকার মেশিন
মোবারক ১৪ বছর ধরে বিদেশে। বাড়ি করেছেন, দোকান দিয়েছেন ভাইকে, মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। এখন দেশে ফিরতে চায়, কিন্তু ভাই বলে, “আর একটু থেকে যা, আমাদের সংসারটা পুরো দাঁড়িয়ে যাবে।” স্ত্রী বলে, “তোমার না হলে আমাদের কী হবে?” মোবারক জানে—সে মানুষ নয়, সে ‘প্রবাসী টাকার মেশিন’।
---
৫. আমি এক টাকার মেশিন
আসিফ বিয়ে করেছে বছর তিনেক আগে। প্রবাসে যাওয়ার একমাসের মাথায় স্ত্রীর ফোন, “টাকা পাঠাও, মায়ের চিকিৎসা লাগবে।” তারপর একে একে ভাইয়ের পড়া, বাবার কৃষিজমি—সব চলে আসে চিঠির মতো। আসিফ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “তুই মানুষ না রে আসিফ—তুই একখান টাকার মেশিন।”
---
৬. একটা টাকার মেশিন প্যাকেট হয়েছে সাদা কাপড়ে
ওমানে কাজ করত শাহেদ। গরমে কাজ করতে করতে একদিন বুকে ব্যথা ওঠে। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই শেষ। দূতাবাস তার মরদেহ কফিনে দেশে পাঠায়। সাদা কাপড়ে মোড়া একটা কফিনে ঢুকে দেশে ফিরল সে—যে একসময় ছিল একটা চলমান টাকার মেশিন, আজ থেমে গেছে চিরদিনের জন্য।
---
৭. একটা টাকার মেশিন পেকেট হইছে
সেলিম ভাইয়ের কাজ ছিল বিল্ডিং-এর উপর ইলেকট্রিকের। একদিন সেফটি বেল্ট ছিঁড়ে পড়ে যান। আর ফিরে আসা হয় না। সেই শরীরটা প্লাস্টিক মোড়া হয়ে দেশে ফিরল। সবাই বলল, “ভাল মানুষ ছিল।” কিন্তু কেউ ভাবেনি—সে ছিল একটা কর্মব্যস্ত টাকার মেশিন, আজ যার যাত্রা শেষ।
---
৮. টাকার মেশিন প্রবাসী জীবন
প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই জাহিদ বের হয় কাজের জন্য, কখনো নির্মাণ সাইট, কখনো ডেলিভারি। রাতে ফিরে হোস্টেলে নিজের ঘরে হাঁপিয়ে ওঠে। ফোনে মা বলে, “আরেকটু টাকা পাঠা, ঘরের ছাদ ভেঙে পড়ছে।” সে জানে, দেশে সে শুধু একটাই পরিচয়ে বাঁচে—‘টাকার মেশিন প্রবাসী জীবন’।